
প্রভাবশালী মার্কিন সাময়িকী টাইম-এর প্রচ্ছদজুড়ে এক কিশোরীর ছবি। পরনে সবুজ পোশাক। চোখে চশমা। পাশে লেখা ‘কিড অব দ্য ইয়ার’ বা বর্ষসেরা শিশু।
টাইম-এর বিবেচনায় বর্ষসেরা এই শিশুর নাম তেজস্বী মনোজ। বয়স ১৭ বছর। সে ভারতীয় বংশোদ্ভূত একজন মার্কিন নাগরিক। বসবাস টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের ফ্রিসকো শহরে। বয়স্কদের ইন্টারনেটের বিভিন্ন প্রতারণা থেকে সুরক্ষা দিতে একটি উদ্যোগের কারণে তেজস্বীকে ২০২৫ সালে সেরা হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে।
তেজস্বীর ওই উদ্যোগের নাম ‘শিল্ড সিনিয়রস’। এটি একটি ওয়েবসাইট। সেটি মূলত ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিদের জন্য। ইন্টারনেটে প্রতারণাগুলো কেমন হয় এবং সন্দেহজনক ই-মেইল বা খুদে বার্তাগুলো কীভাবে যাচাই-বাছাই করতে হয়, তা শেখা যাবে ওই ওয়েবসাইট থেকে। প্রতারণার বিষয়টি ধরা পড়লে বয়স্করা কীভাবে ব্যবস্থা নেবেন, তা-ও জানা যাবে সেখান থেকে।
শিল্ড সিনিয়রস ওয়েবসাইটটি বর্তমানে কেবল সীমিতসংখ্যক মানুষ ব্যবহার করতে পারছেন। কারণ, বয়স্কদের সেবা দেওয়ার জন্য বিনা মূল্যের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সফটওয়্যারের ওপর নির্ভর করছে ওয়েবসাইটটি। এ সমস্যা সমাধানে বর্তমানে তহবিল সংগ্রহ করছে তেজস্বী। উদ্দেশ্য, ওয়েবসাইটটিকে যেন বড় পরিসরে এআই প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে যুক্ত করা যায়।
তেজস্বীর ব্যাপক প্রশংসা করেছে টাইম। তারা বলেছে, বয়স্ক মার্কিনদের আসলেই ইন্টারনেটে সুরক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। এই সুরক্ষা দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছিল তেজস্বী। সাইবার জগৎ নিয়ে বয়স্কদের জানাশোনা বাড়াতে এবং তাঁদের আরও স্বাধীন করে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে এই কিশোরী। ইন্টারনেট নিয়ে বয়স্কদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি করতে তাঁদের পরিবারের সঙ্গেও কাজ করছে সে।
তেজস্বী যখন অষ্টম গ্রেডের শিক্ষার্থী ছিল, তখনই কোডিং করা শুরু করেছিল। ২০২৪ সালে কংগ্রেশনাল অ্যাপ চ্যালেঞ্জে অর্জন করেছিল সম্মাননা। ২০২৫ সালে টেক্সাসের প্লানো শহরে বক্তৃতা দিয়েছিল সব জনগোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে একটি ‘ডিজিটাল সেতুবন্ধ’ গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে। কম্পিউটার বিজ্ঞান, এআই ও সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে পড়াশোনা এগিয়ে নেওয়ার ইচ্ছা তার।
এর বাইরেও নানা উদ্যোগের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছে তেজস্বী। যুক্তরাষ্ট্রের স্কাউটিংয়ের সঙ্গে যুক্ত সে। নিয়মিত বেহালা বাজায় স্কুলের অনুষ্ঠানে। সময় দেয় কর্মসংস্থান ও শিক্ষা উন্নয়ন নিয়ে কাজ করা ভারতীয় অলাভজনক সংস্থা ‘বিভা’তেও। সংস্থাটির মাধ্যমে ভুটানের শিক্ষার্থীদের অনলাইনে গণিত ও ইংরেজি শেখায় সে। স্বেচ্ছাসেবক হিসেবেও বিভিন্ন সংস্থায় কাজ করে এই কিশোরী।
বর্ষসেরা তেজস্বীর একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছে টাইম। তাতে এই কিশোরী বলে, ‘প্রিয়জনদের খোঁজখবর নিতে ভুলবেন না। তাঁরা যে অনলাইনে নিরাপদে রয়েছেন, তা নিশ্চিত করুন।’ আর নিজের উদ্যোগ শিল্ড সিনিয়র নিয়ে তেজস্বীর ভাষ্য, তহবিল পেলে ওয়েবসাইটের এআই-সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান করবেন। এতে আরও বেশি ব্যবহারকারী সেটি ব্যবহার করতে পারবেন।
এর আগে ২০২০ সালে টাইম-এর প্রথম বর্ষসেরা শিশু হয়েছিল গীতাঞ্জলি রাও। সে-ও একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন। খাওয়ার পানিতে দূষণ, মাদকের ব্যবহার ও সাইবার হয়রানি রোধে প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে কাজ করার জন্য তাকে এ সম্মাননা দেওয়া হয়েছিল।